ইতালি পাঠানোর প্রলোভনে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ঢাকার উত্তরায় এক হাওর অঞ্চলের সহজ-সরল মধ্য বয়সী মোঃ রমজান আলীকে অপহরণ করে দুটি দিন আটকে রেখে ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতন, ভয়ভীতি ও অর্থ আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন পরিচিত দালাল তাজুল, কবির, সুজন মেহেদী , মোজাহিদসহ একাধিক চক্র সদস্য।
ভুক্তভোগী মোঃ রমজান আলী, পিতা-মৃত লাট মিয়া, গ্রাম: আব্দুল্লাহপুর, থানা: অষ্টগ্রাম, জেলা: কিশোরগঞ্জ, একজন সাধারণ হাওরবাসী। তার অভিযোগ, চলতি বছরের ১২ মে তারিখে তিনি তার আত্মীয় মোঃ উজ্জ্বল মিয়া (পাসপোর্ট নম্বর: A16849388) এবং প্রতিবেশী সুভাষ রবি দাস (পাসপোর্ট নম্বর: AO6627337) ও রেজাউল করিম কে ইতালি পাঠাতে আগ্রহী হন। এই সুযোগে তাকে প্রলুব্ধ করে একটি চক্র, যার সদস্যরা হলেন—তাজুল ইসলাম, হেলাল মিয়া, কবির হোসেন, আফসার হোসেন ও সুজন মেহেদী।
চক্রের সদস্য মোজাহিদ ইতালি না থেকেও রমজানকে ফোন করে বলেন, “আমি ভালো বেতনে কাজ করছি, তুমি গাবতলীর সুজন মেহেদীর মাধ্যমে এলে সহজেই চলে আসতে পারবে।” এই বিশ্বাসে রমজান তার গ্রামের উজ্জ্বল, রেজাউল ও সুভাষ রবির পাসপোর্টসহ মোট ২০ লাখ টাকা ঢাকার হাজী ক্যাম্প এলাকায় এক বিমান টিকিট অফিসের সামনে সুজন মেহেদীর হাতে হস্তান্তর করেন। যাত্রীরা তখন স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন।
এরপর ২৩ মে ২০২৫ তারিখে মোজাহিদ, তাজু ও কবির তাকে মোবাইলে ফোন দিয়ে উত্তরা লেকপাড়ে দেখা করতে বলেন। নির্দিষ্ট টিনের ঘরে রমজান গেলে তারা আপ্যায়নের নামে তাকে আটকে রাখে। রাত ১১টার দিকে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে এবং উত্তরার মাছ বিক্রেতা মাসুদসহ আরও পাঁচজন অজ্ঞাত ব্যক্তি মিলে বেধড়ক মারধর করে। দেশীয় অস্ত্রের মুখে তাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে মোজাহিদের ভাগিনাকে ‘ডিবি অফিসার’ পরিচয় দিয়ে জোর করে অডিও কলে ১৩ লাখ টাকা পাওয়ার মিথ্যা স্বীকারোক্তি নেয়।
পরে তাকে ‘জমজম টাওয়ার’-এর ৯ম তলায় একটি অফিস কক্ষে নিয়ে আরও নির্যাতন চালানো হয়। তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে বিকাশ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয় এবং নগদ আরও ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। উপর্যুপরি নির্যাতনের একপর্যায়ে তাকে তিনটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় চক্রটি।
অবশেষে তাকে মোবাইল ফোন ফেরত দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়: “এই ঘটনা যদি কাউকে বলিস, তোকে জানে মেরে ফেলবো।” এছারাও মিশর ও শ্রীলঙ্কায় জিম্মি করে অমানুষিক নির্যাতন করে লক্ষ লক্ষ টাকা নিচ্ছে অভিনব কায়দায় সুকৌশলে।
অভিযোগ রয়েছে চক্রটি আন্তর্জাতিক মাফিয়া ও প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা উজ্জল ও সুভাষ রবি কে শ্রীলঙ্কায় ও রেজাউল করিম কে মিশরে আটক রেখে উপুর্যুপরি নির্যাতন করে দফায় দফায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ফেনীর নাইম শ্রীলংকায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উক্ত চক্রের প্রতারনায় পড়ে অভিযোগকারী রমজান আলী নি:স্ব হয়ে ক্যাট জার্নালিস্ট কমিটি বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্হা আইন সহায়তা কেন্দ্র আসক ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশন এর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি গন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সিআইডির সার্বিক সহযোগিতায় রেজাউল করিম কে মিশর এবং উজ্জল ও সুভাষ রবিকে শ্রীলঙ্কা হইতে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় শ্রীলংকায় নিয়োজিত হাই কমিশন অফিসের দায়িত্বরত মানবিক অফিসার কনস্যুলার মাহমুদা বেগমের সার্বিক সহযোগিতায় ।
এখন রমজান আলী আইনের আশ্রয় চেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি এই দুর্বৃত্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।


