ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে হাজারো মানুষ কসবা রেলস্টেশনে ভিড় করেছেন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেকেই রেললাইনে ঘোরাফেরা ও আড্ডায় মেতে উঠেছেন। তবে বিনোদনের এই প্রবণতা যেমন উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করেছে, তেমনি এটি জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কসবা একটি সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে বিনোদনের ব্যবস্থা সীমিত। ঈদের দিন বিকেলে বিনোদনের বিকল্প অভাবেই মানুষ দলবদ্ধভাবে রেলস্টেশনে ভিড় জমান। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ রেললাইনের ওপর বসে গল্প, সেলফি ও ভিডিও তৈরি করছেন। কেউ কেউ লাইনের পাশে পিকনিকের মতো করে বসে সময় কাটাচ্ছেন। আনন্দের এই পরিবেশে অনেকেই নিরাপত্তার বিষয়টি ভুলে যান, যা ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনেক সময় ট্রেন আসার আগেই হুট করে লাইনের ওপরে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায় কিছু তরুণকে। চলন্ত ট্রেনের সামনে ছবি তোলার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজও কেউ কেউ করে থাকেন। এতে শুধু তাদের জীবনই নয়, অন্যরাও হুমকির মুখে পড়েন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, রেললাইনের মতো সংবেদনশীল স্থানে এভাবে জনসমাগম প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। চলন্ত ট্রেন আসার সময় অসচেতন ব্যক্তিরা দ্রুত সরে যেতে না পারলে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে। ট্রেনের চালকরা জানান, অনেক সময় তারা দ্রুতগতিতে ট্রেন থামাতে পারেন না, ফলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কসবা রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থাকায় অতিরিক্ত জনসমাগম শুধু দুর্ঘটনার ঝুঁকিই বাড়াচ্ছে না, এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্যও হুমকি হয়ে উঠতে পারে। সীমান্তবর্তী এলাকায় এত মানুষের ভিড় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্যও বাড়তি চাপ তৈরি করছে। জনসমাগমের সুযোগ নিয়ে চোরাচালান বা অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এছাড়া, বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে কসবা থানা প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক, মোঃ আশরাফ উজ্জল, ও কসবা উপজেলা সাংবাদিক ফোরামের সম্মানিত উপদেষ্টা মোবারক হোসেন চৌধুরী নাসির বলেন, “এভাবে রেললাইনে মানুষের ভিড় অত্যন্ত বিপজ্জনক। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, যা আমরা কেউই চাই না।” তিনি প্রশাসনকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। এসময় কসবা উপজেলা সাংবাদিক ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মো: বিল্লাল সরকারসহ সকল সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রেললাইনে জনসমাগম ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো হবে এবং মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হবে। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে বিকল্প বিনোদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
ঈদের উৎসব উদযাপন করা মানুষের অধিকার, তবে সেই আনন্দ যেন কোনোভাবেই নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। বিনোদনের অভাবে মানুষ যেন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি না নেয়, সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বিকল্প বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।


